সিলেটের বড় বড় আড়তে বন্যার পানি, নষ্ট হচ্ছে মালামাল

‘চার দিন ধরি পানির নিচে। দোখানের চারো-মুখা পানি। খিনরা মানুষ নাই। পানির মাঝে বেছা-বিখি নাই। আগে দিনো ১০০ তনে ২০০ বস্তা পিয়াইজ (পেঁয়াজ) বেছতাম (বিক্রি করতেন)। এখন দিনে পাঁচ তনে দশ বস্তা (৫ থেকে ১০ বস্তা) বেছি। কোনো দিন কাস্টমার আয় না, বিখি ওয় না।’—কথাগুলো বলছিলেন সিলেট নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাট পেঁয়াজ পট্টির ব্যবসায়ী শশাঙ্ক শেখর রায়।

শশাঙ্ক মেসার্স আরিফ ট্রেডার্স নামের পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী। শুধু শশাঙ্ক শেখর নন। সিলেটের পাইকারি ও খুচরা বাজারের আড়ত মহাজনপট্টি ও কালীঘাট এলাকার দুই শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সুরমা নদীর পানি উপচে ঢুকেছে। এতে ব্যবসা ব্যাহত হয়েছে। ক্রেতা নেই। পানিতে থাকায় নষ্ট হয়েছে মালামাল। এতে মহাজনপট্টি ও কালীঘাট এলাকার প্রায় কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেচাকেনা না হওয়ায় প্রতিদিন আরও প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে নগরের কালীঘাট, মহাজনপট্টি এলাকায় দেখা গেছে, সুরমা নদীসংলগ্ন কালীঘাটের খেয়াঘাট এলাকার দেড় শতাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বুকসমান পানি। সেসব দোকানের মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে পানিতে বেশ কিছু মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

খেয়াঘাটসংলগ্ন হাজী আলকাছ মিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চারদিকে পানি। দোকানটি নিচু স্থানে ছিল। তবে দোকানের চারদিকে ইট-সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল তুলে পানির প্রবেশপথ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এরপরও ঘরের মধ্যে প্রবেশ করছিল পানি। সেগুলো বালতিতে করে বাইরে ফেলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের।

ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, ‘পানি ঠেকাতে দিনরাত কষ্ট করছি। কিন্তু এরপরও ঠেকাতে পারছি না। বেচা-কেনার কথা বাদ দিলাম। এখন দোকানে থাকা মালগুলো রক্ষা করাই বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোকানের পাশেই গুদাম। গুদাম আর দোকানের চারদিকে পানি। মালগুলো সরিয়ে নেব, এ উপায়ও নেই। পানি বাড়লে মালামাল রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। ক্ষয়ক্ষতি হলে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।’বিজ্ঞাপন

নগেন্দ্র স্টোর নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী নগেন্দ্র দের দোকানে কোমরপানি। দোকানের ভেতরে থাকা পেঁয়াজে পানি লাগায় অনেকটা পচে গেছে। সেগুলো তিনি বাছাই করতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজে পানি লেগে যাওয়ায় অনেকগুলো নষ্ট হয়েছে। ছোট ব্যবসায়ী হওয়ায় এ ক্ষতি পোষাতে অনেক কষ্ট হবে।

কালীঘাট এলাকায় মালামাল কিনতে এসেছিলেন নগরের বাগবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী সালাম মিয়া। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করছি প্রায় ১৭ বছর ধরে। এর মধ্যে বলতে গেলে সপ্তাহে একবার কালীঘাটে আসি। কিন্তু এমন অবস্থা কখনো দেখিনি। পানির মধ্যে বেশ কয়েকটি দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। খোলা থাকা দোকানগুলোতে মালামালের বেশি দাম চাচ্ছে।’

একই এলাকার আল মদিনা ক্রোকারিজের ব্যবসায়ী নাসির হোসেন বলেন, ‘ময়লা হাঁটুপানি মাড়িয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্রেতা আসে না। এ জন্য বন্ধ রেখেছি। দোকানের মালামাল খাটের ওপরে তোলে রেখেছি।’

কালীঘাট কাঁচামাল ব্যবসায়ী আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল গফফার বলেন, সুরমা নদীর পানি উপচে কালীঘাট এলাকার দেড় শতাধিক দোকানে ঢুকেছে।

এতে ওই দোকানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। সেসব দোকানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই মালামাল বের করেননি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর অনেকে বের করেছেন।

তবে বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর মালামাল নষ্ট হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত কত টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে, সেটির সঠিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও কোটি টাকার মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এ ছাড়া দৈনিক বেচা-কেনায় ক্ষতি হচ্ছে আরও প্রায় কোটি টাকা।