অধিগ্রহনের টাকা পেতে অপরের নামে সৃজিত খতিয়ান বাতিলে চার বছর আগে মামলা করেন নিহত মোনাফ

ভূমি অফিসের দুই অফিস সহকারীর হাতে অপমানিত হন মোনাফ নামে এক ভুক্তভোগী। পরিবারের অভিযোগ অপমানের ধকল সইতে না পেরে মারা যান তিনি। রোববার অপমানের ভিডিওটি ভাইরাল হলে হাটহাজারীতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে সব শ্রেণীর পেশার মানুষ ফেইসবুকে ঝড় তোলেন। দোষিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তোলেন। শনিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে বিজয় নন্দ বড়ুয়া ও নিউটন বড়ুয়াকে মোনাফের মৃত্যুর জন্য দায়ি করে অভিযোগ দায়ের করেন মোনাফের কন্যা মিনু আক্তার। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিনু আক্তার নিহত মোনাফের প্রথম স্ত্রীর সন্তান। মিনুর চার বছর বয়সে মা নুর বেগম মারা যান। পরবর্তীতে সন্তানের দেখভাল’র উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বিয়ে করেন মোনাফ। এদিকে মিনু আক্তারের মা নুর বেগম নাবালিকা থাকাবস্থায় হাটহাজারী পৌরসভা মিরেরহাট মধ্য পাহাড়তলি মৌজার তার বাবার সূত্রে পাওয়া জমিসহ আনোয়ারা বেগম নামে এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেন ভাই রফিক মিয়া। পরে আনোয়ারা বেগম জসিম উদ্দিন নামে জনৈক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিলে জসিম উদ্দিন নুর বেগমের প্রাপ্ত অংশসহ নামজারি খতিয়ান সৃজন করেন। অপরদিকে ২০১৭ সালে ওই জমি উন্নয়নের জন্য অধিগ্রহন করে সরকার। নুর বেগমের জায়গা নামজারি অনুযায়ী অধিগ্রহনের টাকা তুলে নেয়ার পায়তারা শুরু করে জসিম। জানতে পেরে মোনাফ জসিমের নামে সৃজিত খতিয়ান বাতিলের জন্য হাটহাজারী ভূমি অফিসে মামলা করেন যার নং- ১৫৭/১৯। মামলার ফাইল দেখাশুনা করেন বিজয় নন্দ বড়ুয়া ও নিউটন বড়ুয়ার কাছে। তারা দীর্ঘ তিন বছর ধরে মামলার নিস্পত্তি না করে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে আসছিল মোনাফকে। ওইদিকে অধিগ্রহনের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন জসিম নামে ওই ব্যক্তি। পরে আগষ্টে মোনাফ হতাশ ও ক্ষিপ্ত হয়ে হয়রানি করার কারন জানতে চাইলে অভিযুক্তরা মোনাফকে চরম অপমান করে। সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে গত মাসে চমেক মারা যায় মোনাফ। তারা জানান, মৃত্যুর জন্য অভিযুক্তরা দায়ি। তারা বলেন, মিনু আক্তারের মা নুর বেগম নাবালিকা ছিলেন যখন রফিক আনোয়ারা বেগমের কাছে জমি বিক্রি করেন তাহলে মিনু আক্তারের স্বত্ত্ব কি আইনগত বিক্রি করা যাবে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় অভিযুক্ত বিজয় নন্দ বড়ুয়ার সাথে। অপমানের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাকে দুর্ব্যবহার করায় সহ্য করতে না পেরে আমিও করেছি। এটা আমার উচিত হয়নি। মামলার খারিজের কথা কেন গোপন করা হয়েছিল দীর্ঘ নয় মাস। কেন বার বার মোনাফ আসলেও তাকে না জানিয়ে হয়রানি করা হয়েছিল কেন এতদিন নকল না দিয়ে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়নি এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি বিজয় নন্দ বড়ুয়া। বদলি কেন করা হয়েছে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এটা নিয়মতান্ত্রিক বদলি দুজনেরই। নিউটন বড়ুয়া পটিয়ায় যোগদান করতে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
একজন বাদীর সাথে এমন অসাদাচারণ এবং মামলা খারিজের বিষয় গোপন করা ন্যায়সঙ্গত হয়নি জানিয়ে এসিল্যান্ড আবু রায়হান বলেন, বিষয়টি আমাকে অভিযুক্তরা কিংবা ভিকটিম কেউ জানায় নি। অন্তত ভিকটিম আমাকে বিষয়টা জানালে তাকে মামলার বিষয়ে অবহিত করা যেত। অভিযুক্তদের কারনে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে ভূমি অফিসে। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তাদের নিয়মতান্ত্রিক বদলি হলেও তারা তদবির করে হাটহাজারীতে কর্মরত থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বদলি বহাল রেখেছি। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের নির্দেশনায় উর্ধ্বতনকে লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে। ভিকটিমের পরিবারের করণীয়র ব্যাপারে জানতে চাইলে এসিল্যান্ড বলেন, ভিকটিমের পরিবার নকলের আবেদন করে তা নিয়ে এডিসি রেভিনিউ বরাবরে আবেদন করতে পারবেন।
এদিকে মোনাফের বর্তমান স্ত্রী রুবি আক্তার জানিয়েছেন, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন। মিনুসহ তিন মেয়ের বিয়ে দিলেও ঘরে আইরিন নামে এক মেয়ে ও ফয়সাল নামে এক কিশোর রয়েছে। ছেলেটির ব্রেইনে সমস্যা। কোন কাজ করতে পারেনা। জানিনা এখন সংসার কিভাবে চলবে। মোনাফের কিছু জমিও অন্যের দখলে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও অসহায়ের দরুন কিছুই করতে পারেনি। যদি মামলাটি পুনবিবেচনা করে সরকার অধিগ্রহনের টাকাগুলোর ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। মামলা নিয়ে প্রতিনিয়ত আদালতে আসা যাওয়ার মত কোন টাকা পয়সাও নাই। আদৌ নিহত স্বামীর কষ্টের ফসল তথা অধিগ্রহনের টাকাটা পান কিনা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম জানান, ঘটনার বিস্তারিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যে কোন ভিকটিমের উচিত কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হলে এসিল্যান্ড প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো। অনেকে অফিস সহকারীরা আছেন যারা তথ্য গোপন রাখেন। যা অফিস কর্মকর্তা জানেনই না।