নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি এবং অন্যান্য কোনো দল নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে লালবাগের শ্মশানঘাট এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি জোন-৫–এর আয়োজিত জনসভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। লোডশেডিং, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ জনসভা হয়েছে।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ অবৈধ, ফ্যাসিবাদী, অত্যাচারী ও হত্যাকারী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। বিএনপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করেছি। সবাই একমত হয়েছি।’
সরকারের বিদায় চান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমরা জনগণের সরকার কায়েম করব।’
বিএনপি কখনো আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো দিন আপনাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করিনি। জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়া, কেউ করেনি। আপনাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তাঁরা বিজয়ী হয়েছিলেন। আমরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই বিজয়ী হতে চাই।’
‘আমরা কখনো বলি না, আপনি পদত্যাগ করেন আমরা ক্ষমতায় বসব। আমরা বলি, আপনারা পদত্যাগ করেন। অবৈধ সংসদ বাতিল করেন। জনগণকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেন। জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে, তারা ক্ষমতায় বসবে।’
এই সরকারের ইচ্ছা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকা আর লুটপাট করা—উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এ সরকারের কাছে কোনো দাবি, আবেদন নেই। কারণ, তাদের শুধু যেকোনো প্রকারে ক্ষমতায় টিকে থাকা আর লুটপাট করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার ইচ্ছা রয়েছে। জনগণের জন্য তাদের কাছে কিছু চেয়ে লাভ নেই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তারা জনগণকে কিছু দেবেও না।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে ঢাকা মহানগরের লালবাগ, চকবাজার ও কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বড় বড় মিছিল নিয়ে লালবাগ শ্মশানঘাট–সংলগ্ন সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। অনেকে জুমার নামাজ শেষ করে সরাসরি সমাবেশে যোগ দেন। তিনটি ট্রাক যুক্ত করে বানানো অস্থায়ী মঞ্চের দুই পাশে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বসে ও দাঁড়িয়ে সমাবেশে অংশ নেন।
বিশেষ অতিথি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর কত? আমাদের হাতে লাঠি থাকে না। তবে আপনাদের লাঠিয়াল বাহিনী আসলে, তাদের পর্যুদস্ত করা হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরাও লাঠি হাতে নেব।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, ‘আগামীর নির্বাচনে যাতে সব ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, আমরা সেই জন্য আন্দোলন করছি। তবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সেটা কখনো সম্ভব না। তবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া কেউ আর ঘরে ফিরবে না। এই দেশে কাউকে যা খুশি তা করতে দেওয়া হবে না।’
জনসভার প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।