মহান আল্লাহপাক ভালোবেসে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এজন্য মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে যায় তখনি আল্লাহ মানুষ জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য যুগেযুগে নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছেন। সময়ে সময়ে আসমানী কিতাবও নাযিল করেছেন। যুগের ভয়াবহতা এবং চাহিদার নিরিখে নবীদের আগমন ছিলো যৌক্তিক এবং প্রাসঙ্গিক। যে যুগের মানুষের যত বেশি চারিত্রিক অবনতি হয়েছিলো সে যুগে ততবেশি ক্ষমতা সম্পন্ন নবীর আগমন ঘটেছিলো। আইয়্যামে জাহেলিয়ত এমন এক সময় যখন পূর্বেকার সকল বর্বরতা হার মেনেছিলো ঠিক সে সময়ই নবীদের নবী, খোদার হাবীব, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (দ.) এ ধরার বুকে আগমন করেছেন। যিনি আঁধারে ডুবে যাওয়া মানবজাতিকে শিখিয়েছেন সিজদায় নত হয়ে একমাত্র রবের আনুগত্য, চারিত্রিক কোমলতা, সবর শোকর, তাকওয়া তাওয়াক্কুল, তাহারাত আর তওবার নিরিখে জীবন যাপনের গুরুত্ব। নবীজির পর মহান এ দায়িত্ব নবীর ওয়ারিশগণ তথা অলি আল্লাহগণ পালন করে আসছেন। কালের পরিক্রমায় আমরা পেয়েছি এমন এক মহান ব্যক্তিত্বকে যিনি মকামে গাউছিয়্যতে আসীন হয়েছেন, খলিফায়ে রাসুল এর মর্যাদা পেয়েছেন।
গত ৮ অক্টোবর (শনিবার) দিনরাত ব্যাপী চট্টগ্রাম বায়েজিদস্থ কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ কমপ্লেক্সে ৬৯ তম জশ্নে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ আওলাদে রাসূল হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী এসব কথা বলেন।
মানবজাতির ক্রান্তিকালে যিনি গাউছিয়্যতের কন্ঠে ঘোষনা দিয়েছেন- হে যুবক নামাজ পড়, রোজা রাখ, নবী করিম (দ.) এর উপর দরূদ পড় এবং মাতৃভূমি শান্ত কর। এ মহান ডাকে সাড়া দিয়ে অগণিত যুবকের যে স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম তা অস্বীকারের কোন উপায় নেই। এসমস্ত যুবকেরা প্রতিদিন ১১১১ বার দরূদ শরীফ, মোরাকাবা, তাহাজ্জুদ, ফয়েজে কোরআন, জিকিরে জলীর মাধ্যমে নবীজির দেখানো পথে নিজেদের আত্মশুদ্ধির জন্য জীবনযাপন করছে। যে যুগে হারাম হালালের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর সে যুগে এসে হালাল পথে থেকে যুবকদের মাঝে এবাদতের এমন আগ্রহ উদ্দীপনা যা নিঃসন্দেহে হযরত গাউছে আজমের দৃশ্যমান দস্তগীরি, সর্বোপরি মহান আল্লাহপাকের অনুগ্রহ। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) এর আদর্শে উজ্জিবীত যে চিরন্তন চেতনা হযরত গাউছে আজমের তরিক্বতে রয়েছে তা একজন মানুষকে শুধু রবিউল আউয়ালে নয় বরং সারা বছর ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে নবীজির সুন্নাহ মানার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়। এছাড়া প্রতিদিন মুহাব্বতের নিয়তে হাজারবারের অধিক দরূদ শরীফ পড়ার মাধ্যমেও সত্যিকারের ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) এর উদযাপনের অনুশীলন একজন সাধারণ মানুষকে খালেছ আশেকে রাসুলে পরিণত করে। যে যত বেশী দরূদ পড়ে সে নবীজির তত কাছে। একজন তরিক্বতপন্থী প্রতিদিন ১১১১ বার করে জীবনে কতবার দরূদ শরীফ আদায়ের আমল করে যায় তা আল্লাহ ও রাসুল (দ.) ভালো জানেন। এ থেকেই বুঝা যায়, বিশ্বজোড়া রাসুলনোমা এই মহান তরিক্বতের মধ্যেই রয়েছে মুক্তির চিরন্তন নিয়ামত, প্রশান্তির খোদায়ী বার্তা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য সদস্য ও মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল মনছুর এর সভাপতিত্বে মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা এইচ এম. আবু বকর, মাওলানা মোঃ জসিম, মাওলানা মোঃ এরশাদ হোসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছরওয়ার কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে পবিত্র জশ্নে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল উপলক্ষে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল পবিত্র খতমে কোরআন, ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) শীর্ষক সেমিনার, বাদে আছর তরিক্বতের বিশেষ পদ্ধতিতে ফয়েজে কুরআন প্রদানের মাধ্যমে নূরে কুরআন বিতরণ। বাদে নামাজে মাগরিব ফাতেহা শরীফ আদায়, ঈছালে ছাওয়াব, রাসূল পাক (দ.) এর সুন্নাত তরিক্বায় বায়়আত (যারা বায়়আতের নির্দিষ্ট ছবকপ্রাপ্ত) , মোরাকাবা ও জিকিরে গাউছুল আজম মোর্শেদী। বাদে এশা মাননীয় মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেবের নূরানি তক্বরির মোবারক, মিলাদ, কিয়াম, আখেরী মোনাজাত এবং তাবাররুক বিতরণ ।
মিলাদ ও কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি, অসহায় নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।