সাদ্দাম হোসেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে সে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ’ প্রজেক্টের আওতায় ল্যাপটপ গ্রহণ করে।
তখন থেকেই সে ভাবতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদত্ত এই ল্যাপটপটির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে নিজের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ক্যারিয়ারের উন্নয়ন ঘটানো যায়। যেই কথা সেই কাজ। তার তৈরি করা সামাজিক নিরাপত্তা জনিত সেল্ফ প্রোটেক্ট-ইমার্জেন্সি সেফটি আ্যাপের জন্য তিনি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে জাতীয় পুরস্কার ও তহবিল অর্জন করেন এবং বর্তমানে উইংকি টেক লিমিটেড এর সিইও। তার প্রতিষ্ঠানে আরো অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
শুধু সাদ্দাম হোসেন নয়, মাইনুল হাসান দুলন, শফিউল ইসলাম কিংবা আশরাফ আলী- তাদের মতো হাজারো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যলয় থেকে প্রাপ্ত ল্যাপটপের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ফ্রিল্যান্সিং, নেটওয়ার্কিং, অনলাইন বিজনেস, ব্যাংক, সফটওয়্যার ফার্মসহ নানা ক্ষেত্রে নিজেকে উদ্যোক্তা অথবা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে নিজেকে সফল পর্যায়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। গুগল, ইয়াহু, ব্যাংকিং সেক্টর, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপর্যায়ে ড্যাফোডিল অ্যালামনাইরা দেশে-বিদেশে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে যোগ্যতা এবং দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।
মূলত, তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশমান ধারার সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যুগোপযোগী করে তুলতে এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরি এবং উদ্যোক্তার বাজারে শিক্ষার্থীদের দক্ষ এবং যোগ্য করে গড়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ‘একজন ছাত্র একটি ল্যাপটপ’। ২০১১ সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি প্রায় ৫০ হাজার ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। এমনকি করোনাকালীন কঠিন সময়েও এই ল্যাপটপ বিতরণ কার্যক্রম থেমে থাকেনি। সরকারি ট্যাক্স, ভ্যাট এবং দামের উর্ধ্বগতিসহ শত প্রতিকূলতা এবং প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে শিক্ষার্থীদের একটি অন্যতম শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ল্যাপটপ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা করোনাকালীন সময়েও নির্বিঘ্নে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ল্যাপটপই প্রদান করে না, ল্যাপটপটি দেওয়ার পূর্বে মেন্টরিং, মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষাথীর উপর রিসার্চ করে শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপটির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর ফলাফল যাতে ভালো হয়, প্রতিনিয়ত সেই দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পেশাগত এবং নৈতিক উন্নয়নের জন্য এম্প্লয়াবিলিটি ৩৬০ ডিগ্রি, আট অব লিভিং, কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিংসহ নানা রকম কোর্স পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয়, যাতে শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারে কোনোরকম সুযোগ হাতছাড়া না হয়।
শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় যেখানে ড্যাফোডিল পরিবারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড সহযোগিতা করে আসছে। যেমন গুগল সাইট তৈরি করা, গোএ্যাডুর বিভিন্ন কোর্স, ভিডিও রিজিউমিসহ শিক্ষার্থীদের টেকনোলজিক্যাল দক্ষতার বেসিক কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। গুগলে সার্চ করা হলে বর্তমানে বাংলাদেশের ভিডিও রিজিউমির ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ পাওয়া যাবে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে ল্যাপটপ।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম লক্ষ্য। ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ারের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ল্যাপটপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠছে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আইটি উদ্যোক্তা এবং জব মার্কেটে ভালো করছে।
ল্যাপটপ যে একটি শিক্ষার্থীর জীবন বদলে দিতে পারে এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে। একটা সময়ে ব্যবসায় প্রশাসনে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ ছিল। এখন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে। এটাই যুগের চাহিদা। বর্তমান সময়টাই হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া এই পৃথিবীতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরকে সময়ের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদেরকে ল্যাপটপ দিচ্ছে। এটি এক যুগান্তকারী, সাহসী এবং অভিনব উদ্যোগ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরকে ল্যাপটপ কেনার জন্য হয়তো ঋণ দেয়। কিন্তু বিনামূল্যে ল্যাপটপ প্রদান একটি নজিরবিহীন উদ্যোগ।
২০১১ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশানাল ইউনিভার্সিটির প্রথম ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যারা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণের মতো সাহসী কার্যক্রম শুরু করেছে। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, প্রযুক্তি আজ শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণের উদ্যোগ একটি সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তিনি শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহবান জানান।
ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আইসিটি সেক্টরকে এগিয়ে নিতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকারকে সহায়তা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে বিপুল সংখ্যক আইসিটি দক্ষ জনশক্তি ও মানবসম্পদ প্রদান করছে, যারা বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরে অবদান রাখছে। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উধ্বর্তন কর্মকর্তাবৃন্দ বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণ কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
লেখক: ঊধ্বর্তন জনসংযোগ কর্মকর্তা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি