‘নতুন সেন্টমার্টিন’ পাটোয়ারটেক

নদীর নাব্যতা সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বেশিরভাগ পর্যটই সেন্টমার্টিন বেড়াতে যেতে পারছেন না। এ নৌপথে কবে নাগাদ জাহাজ চলাচল করবে তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। তবে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে যে দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিন যায় তাদের অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত টিকিট মূল্য অনেক পর্যটকের বাজেটের বাইরে। তাই বেশিরভাগ পর্যটক সেন্টমার্টিনে বেড়ানোর স্বাদ মিটাতে বেঁছে নিচ্ছেন উখিয়ার ইনানীতে অবস্থিত পাটুয়ারটেক সৈকতকে। এ সৈকতকে পাথররাণী বিচ বা পাথুরে বিচও বলে থাকেন অনেকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পাটুয়ারটেক সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। তাদের অনেকেই সমুদ্রের নীল পানিতে পাথরের সঙ্গে ছবি তুলে সময় কাটাচ্ছেন। ইনানী সৈকতের মতো এখানকার পানিতেও রয়েছে পাথর। সেই পাথরে ধাক্কা দিয়ে ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। আর সেই সৌন্দর্যে মেতেছেন পর্যটকরা।

এখন থেকে ৩/৪ বছর আগে পাটুয়ারটেকে তেমন পর্যটক লক্ষ্য করা না গেলেও বর্তমানে পর্যটকরা শহরের সৈকতে বিচরণ না করে এদিকে চলে আসছেন। কক্সবাজার শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে এই সৈকতের অবস্থান। পর্যটনের এই মৌসুমে তাই প্রতিদিন এখানে সময় উপভোগ করতে আসছেন হাজারো পর্যটক।

পাটুয়ারটেক সৈকতটি দেখতে অনেকটা বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের মতো। ফলে খুব সহজেই এ সৈকতটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। ফলে অনেক পর্যটক এখন ঘুরতে আসছেন।

কক্সবাজার-টেকনাফ উপকূলী এলাকার ঠিক মধ্যভাগে মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন পাটায়ারটেক সমুদ্র সৈকত। এটি উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নে অবস্থিত। এই সৈকতের পশ্চিমে সমুদ্র, পূর্বে রয়েছে উঁচু উঁচু পাহাড়। এই দুইয়ের মাঝখানে সরু মেরিনড্রাইভ। মেরিনড্রাইভের পাশে পানের বরজ, সুপারি বাগান ও নানান জাতের সবজির ক্ষেতের সৌন্দর্য পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। সাগর-পাহাড় আর মেরিনড্রাইভের গভীর মিতালীতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হারিয়ে যান অন্য ভুবনে।

 

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি রমজান-সোহানা। তারা বলেন, পাটুয়ারটেক সৈকতে এই প্রথম আসলাম। অনেকের কাছে শুনেছি সেন্টমার্টিনের মতো এখানে সুন্দর সুন্দর পাথর আছে। এসে দেখলাম কথা সত্য। এখানে নতুন বউকে নিয়ে ছবি তুলেছি আনন্দ করছি। তবে পর্যটক আগমনের সুযোগে দোকানিরা খাবারের দাম একটু বেশি রাখছেন।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষক চৌধুরী আজমীর হোসাইন বলেন, ‘প্রতিবছর পরিবার নিয়ে কক্সবাজার শহরে আসা হলেও এদিকে তেমন আসা হয় না। তবে এই পথে টেকনাফ গিয়েছিলাম একবার। তখন এই সৈকতের সৌন্দর্য লক্ষ্য করি। এবার ট্যুর প্লান ছিল শহরের বাইরে কোথাও ঘুরবো। তাই আমরা মেরিনড্রাইভ এবং উপকূলী অঞ্চলের আশে পাশে যে জায়গাগুলো আছে তা দেখার জন্য এসেছি। পাটুয়ারটেক সৈকতে এসে মনে হলো সেন্টমার্টিনে এসেছি। তবে সেন্টমার্টিনের পানি আরেকটু নীল এবং সমুদ্র শান্ত। তারপরও এ সৈকতকে সেন্টমার্টিনের প্রতিচ্ছবি মনে হচ্ছে।’

শিক্ষার্থী আলিফ শাহরিয়ার বলেন, ‘মেরিনড্রাইভের সঙ্গে লাগুয়া পাথুরে বিচ দেখে মনটা ভরে গেল। এছাড়া মেরিনড্রাইভের পূর্বপাশে বড় বড় পাহাড় দেখে অনেক ভালো লাগছে। এখানে এসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছি।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘মূল্য তালিকার বাইরে খাবারের দাম অতিরিক্ত রাখাসহ পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যটকরা হয়রানি হলে জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রে গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’

এদিকে পর্যটকের সঙ্গে এখানে বাড়ছে যত্রতত্র দোকানপাটের সংখ্যাও। দোকানের বর্জ্য- প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, ময়লা-আবর্জনাও সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ধ্যার পর দোকানগুলোর আলোকসজ্জা ও হাই ভোল্টেজ বাতি সৈকতের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সামুদ্রিক কাছিম বাতির আলোর কারণে বালিয়াড়িতে এসে ডিম দিতে পারছে না। কাঁকড়াগুলোর আবাস স্থল নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগের শেষ নেই। এছাড়াও সৈকতের আশেপাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জায়গা-জমি কিনে দেওয়াল দিয়ে ঘিরে রাখায় এর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘পাটোয়ারটেক সৈকতে দিন দিন পর্যটক বাড়ছে এটা পর্যটন খাতের জন্য পজিটিভ। কিন্তু এমন সুন্দর জায়গাটিতে যত্রতত্র দোকান ও দোকানগুলোর বর্জ্য পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে।’