শিক্ষার্থীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রাম কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন সিটি করপোরেশনের চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল মোস্তফা টিনু।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, ‘ছাত্রীদের দাবি, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নানাভাবে যৌন নির্যাতন করে আসছিল। এর প্রতিবাদে সকাল থেকে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছে শিক্ষার্থীরা। আমি স্কুলে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেছি। এ ঘটনায় সিটি করপোরেশন থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।’
রবিবার সকাল ৯টা থেকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন অভিভাবকরাও। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে তার অফিস কক্ষে গিয়ে জুতা নিক্ষেপ করে। প্রায় সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্রধান শিক্ষককে কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী ছাত্রীরা জানায়, প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন একজন লম্পট, চরিত্রহীন ব্যক্তি। তার দ্বারা অনেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি ছাত্রীদের সঙ্গে কোনও ধরনের খারাপ আচরণ কিংবা কোনও অশোভন কাজে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করছেন। তারা ছাত্রীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন।’
এদিকে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতনে জড়িত। অনেককে হোয়ার্টসপে কু-প্রস্তাব দিয়ে এসএমএস পাঠিয়েছে। তার দ্বারা অসংখ্য ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কোনও ছাত্রী তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেওয়াসহ নানা হুমকি দিতো। এ কারণে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিনি। দিন দিন আলাউদ্দিনের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়ে তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি।’
নগরের পাঁচলাইশ শুলকবহর এলাকার বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ২০০৪ সালে পুলিশ লাইন স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আগেও ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ২০১৩ সালে প্রাক্তন এক ছাত্রী প্রত্যয়নপত্র নিতে স্কুলে এলে ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করে সে। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্কুলজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিছুদিন পর সে আবারও স্কুলে যোগদান করে। এখন আবারও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে।’
এদিকে দুপুরে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে বরখাস্ত করার বিষয়টি ঘোষণা করার পর আন্দোলনরত ছাত্রীরা উল্লাস করে।