মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে মাটি বিক্রি, হুমকিতে ফসলি জমি

মানিকগঞ্জে সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের বসায় রাতের আঁধারে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এতে করে আশপাশের ফসলি জমিগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে, মাটি বিক্রিকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ। আটিগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে মৌখিকভাবে মাটি না কাটার জন্য অনুরোধ করা হলেও তার কোনও প্রভাব পড়েনি সেখানে।

সরেজমিনে ওই এলাকায় দেখা যায়, বাসাই কুড়িখোলা রাস্তার পাশের তিনটি জমি থেকে ১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিচ্ছেন ফারুক হোসেন ও ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের আলমগীরসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। স্থানীয় লোকজন প্রথমদিকে কয়েক বার বাধা দিলেও, প্রভাবশালীরা নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটির কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিনে না কাটলেও সরকারি অফিস ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিকেল থেকে শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব। এসব মাটি পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রাম ট্রাক। এতে করে রাস্তা-ঘাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা চলে কৃষি কাজ করে। প্রতিটি জমিতে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল হয়। এই ফসল বিক্রি করে সংসারের সব কাজ করে থাকি। ফারুক ও আলমগীর প্রথমে আমাদের কাছে মাটি নেওয়ার জন্য রাস্তা চেয়েছিলেন। আমরা দিতে না চাওয়ায় তারা অন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভয়-ভীতি দেখায়। নিজ থেকে না দিলে জোর করে মাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা করে নেবেন বলেও হুমকি দেন।

 

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, আমরা পারবো না, সেজন্য প্রভাবশালীরা যা খুশি তাই করছেন। তাদের ওপর দিয়ে আমাদের অঞ্চলে কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

আটিগ্রাম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রবিউল হাসান বলেন, তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। মাটি কাটতে নিষেধ করি। এই মাটি কাটার জন্য আমার ওয়ার্ডে রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তাদের বিষয়টি জানালে, আলমগীর নামে এক জন বলেন, ‘আমরা কথা বলেই সব কিছু করছি’।

আটিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূর এ আলম সরকার বলেন, বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে শুনেছি। আমি জেলার বাইরে থাকার জন্য তাকে কোনও নির্দেশনা দিতে পারিনি। সরেজমিন গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মাটি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন ও আলমগীর মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

আটিগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) সাত্তার হোসেন বলেন, তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে এ বিষয়টি আমি আমার ওপরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, বাসাই কুড়িখোলা অঞ্চলে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।