বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলার আসামি আবুল কাশেম চৌধুরী ২০ বছর পর আত্মসমর্পণ করলে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিনের আবেদন করেন।
আদালত জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে বলেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ।
আবুল কাশেম চৌধুরী ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
তিনি কাশেম চেয়ারম্যান নামে পরিচিত ও ২০ বছর ধরে পলাতক ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই রাতে নগরের চকবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে জামাল উদ্দিন অপহৃত হন। পরে তার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অপহরণের দিনই নগরের চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন জামাল উদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন। মামলার অষ্টম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ২০০৬ সালের ১০ জুলাই সর্বপ্রথম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তাতে তিনি মামলা থেকে বিএনপির সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। মামলার বাদী এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন একই বছরের ১৭ জুলাই। আদালত তা গ্রহণ করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর আগের অভিযোগপত্রের মতোই ঘটনার মূল হোতাদের বাদ দিয়ে ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির এএসপি হামিদুল হক।
মূল হোতাদের বাদ দেওয়ায় বাদী আবার আদালতে নারাজি আবেদন করেন। কয়েক দফা পিছিয়ে ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নারাজি শুনানির দিন ধার্য থাকলেও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আসায় শুনানি হয়নি। মামলার আসামি কালা মাহাবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে আসামি মারুফ নিজাম ও সোবহান হাইকোর্টে রিট করায় উচ্চ আদালত এ স্থগিতাদেশ দেন। ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেই স্থগিতাদেশগুলো প্রত্যাহার করে নেন আদালত। কিন্তু এরপর সুপ্রিম কোর্টে প্রত্যাহার আদেশ বাতিলের আবেদন করেন আসামিরা। পরে এ আপিল খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্ট। এর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন আসামিরা। সেটিও ২০১৫ সালে খারিজ করে দেন আদালত।
এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিশন মামলা দায়ের হয়। রিভিশন মামলাও খারিজ করে দেন আদালত। জামাল উদ্দিন অপহরণের প্রায় দুই বছর পর অপহরণের অন্যতম হোতা আনোয়ারা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান শহীদকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলার ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরের পাহাড়ি এলাকা থেকে ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব। সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে কঙ্কালটি অপহৃত জামাল উদ্দিনেরই। এরপরই মূলত মামলাটি গতি পায়।
বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন কাশেম চেয়ারম্যান। কিন্তু হাইকোর্টে আগাম জামিন না দিয়ে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সকালে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
এ মামলায় ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। মামলার ১৪ আসামির মধ্যে এত দিন কারাগারে ছিলেন শুধু মো. আলমগীর নামে এক আসামি। সর্বশেষ কাশেম চেয়ারম্যান কারাগারে গেলেন। বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।