শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পাঠ্যবইয়ে কোথাও ধর্মবিরোধী কোনও বিষয় থাকার সুযোগ নেই। কারণ আমরা নৈতিকতার শিক্ষায় বিশ্বাস করি এবং ধর্মীয় শিক্ষা সেই নৈতিকতার মূল স্তম্ভ।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে নগরের বায়েজিদ থানাধীন আরেফিন নগরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে।
বলা হচ্ছে, আমাদের নতুন বইয়ে ইসলাম ধর্মবিরোধী বিষয় আছে। এটি সত্য নয়।
ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত সকল বিষয় সরিয়ে দিয়ে ভিন্নধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে, এটি একেবারে অসত্য। তিন বছর আগের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বইয়ের ছবি দিয়ে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে, যে বইটি এখন সেখানেও চলে না।
একটা অপশক্তি আছে যারা এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের আপনারা সবাই চিনেন। তারা মিথ্যাচার করে শুধু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশটাকেও নষ্ট করতে চায়।
পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বইয়ের ভুল শনাক্ত করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে কিছু ভুল শনাক্ত হয়েছে। সে ভুলের মধ্যে একটি তো একেবারেই খুব বড় তথ্যগত ভুল- বঙ্গবন্ধুর শপথ গ্রহণ বিষয়ে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ২০১৩ সাল থেকে প্রত্যেক বছরের বইয়ে এই ভুল ছিল। কখনও কারো চোখে পড়েনি। এ বছর শিক্ষার্থীরা বইগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছে বলেই ভুলটি ধরা পড়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই যে পাঠ্যবইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, এটি পাঠ্যবইগুলোর মান উন্নত করতে এবং আরও নির্ভুল করতে আমাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করবে।
ডা. দীপু মনি বলেন, করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যারা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে স্নাতক হয়েছেন তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখবেন। আমাদের পোশাক শিল্পে যে নারী কর্মীরা আছেন তারা এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা। তৈরি পোশাক শিল্পে তারা অবদান রাখছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি আজ অনেকটাই সফল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা সমাজকে বদলে দিতে-নেতৃত্ব দিতে কাজ করছে।
করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়টা সারা বিশ্ববাসীর জন্য কষ্টকর ছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু ১৭-১৮টা দেশের শিক্ষার্থীরা আছেন, রয়েছেন বিভিন্ন দেশের শিক্ষকরাও; কাজেই এখানে মুখোমুখি ক্লাস করানো সম্ভব হয়নি। তাই আমরা শুরুতেই অনলাইন ক্লাসের দিকে চলে গিয়েছিলাম। সেটি আমরা সফলভাবে করতে পেরেছি। পরে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পর যেটুকু ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছি। আপনারাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুনেছেন। তারা খুব খুশি। করোনার কারণে আগের দুটি সমাবর্তন আমরা সময়মতো করতে পারিনি। তাই আজ ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ এই তিন বছরের সমাবর্তন একযোগে হয়েছে।
কাগজ সংকটের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত বছর কাগজ শিল্প বিরাট একটা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কাগজের একটা বড় সংকট ছিল। ডলার পরিস্থিতির কারণে আমরা আমদানির দিকেও যেতে পারিনি। এর পরেও সকল শিল্পের সহযোগিতায় জানুয়ারির ১ তারিখ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দিতে পেরেছি। বাকি বইগুলো এ মাসের মধ্যেই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিবো।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারী শিক্ষা দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে নারীশিক্ষা বেশ কঠিন। তাদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি রুবানা হক বলেন, বিগত বছরগুলোতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনও চলমান। এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানান দেশে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। যেসব দেশ নারীশিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে এবং নারীদের শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে তাদেরকে এইউডব্লিউতে স্বাগত জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ার, সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন।
তিন বছর পর হলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনে ৬ জনকে এনডি মাতসুই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৮ দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে বিগত তিন বছর সমাবর্তন হয়নি। এবার ২০২০, ২০২১, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৩০০ স্নাতককে সনদ প্রদান করা হয়।