চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা ওয়াসার পানি মুখেও নেওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত লবণাক্ততা এবং দুর্গন্ধের কারণে গত কয়েকদিন ধরে এমনটাই হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক গ্রাহক। তবে ওয়াসা কর্মকর্তারা বলছেন, পানিতে লবণাক্ততা বাড়লেও এখন পর্যন্ত খাবার উপযোগী। যা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এই বিষয়ে শুক্রবার (১০ মার্চ) বিভিন্ন সংবাদপত্রে জরুরি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে বলা হয়েছে, চলমান শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত পানি নির্গত হচ্ছে না। ফলে মোহরা পানি শোধনাগারে হালদা নদী থেকে উত্তোলিত পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পরিশোধনের পরও সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততা থেকে যাচ্ছে। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ব্যবহারের সময় লবণাক্ততা অনুভব হলেও তা মানব স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে নগরে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা ডাব্লিউএইচও’র গাইডলাইন অনুযায়ী শতভাগ জীবাণুমুক্ত।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, অনিবার্য প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট সাময়িক অসুবিধার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় কাপ্তাই লেকে পানি কমে গেছে। এ কারণে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি ছাড়া হচ্ছে না কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর উজানে মিঠা পানির প্রবাহ কমে গেছে। জোয়ারের সঙ্গে কর্ণফুলী হয়ে হালদা নদীতে ঢুকছে সাগরের লোনা পানি। ফলে মোহরা শোধনাগারে পানি শোধনের পরও অতিরিক্ত লবণ থেকে যাচ্ছে। গভীর নলকূপের পানি মিশিয়ে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা চলছে। তবে আমরা নিয়মিত পানি পরীক্ষা করে যাচ্ছি। ওয়াসার পানির লবণাক্ততা বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে আছে। খাবার অনুপযোগী হলে আমরা বন্ধ করে দেবো অথবা পানি পান না করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
গৃহিণী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ওয়াসার পানি ফুটিয়েও পান করা যাচ্ছে না। অত্যন্ত লবণাক্ততা রয়েছে। সে সঙ্গে দুর্গন্ধও। এ কারণে ওয়াসার পানি মুখেও নেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ওয়াসার কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। কোনও সুরাহা হচ্ছে না। কতদিন পানি কিনে পান করতে হবে তাও বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে, নগরীর মুরাদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, কতদিন পর পর ওয়াসার পানিতে হয় লবণাক্ততা না হয় দুর্গন্ধ দেখা দেয়। আবার কখনও ময়লা পানিও আসে। দফায় দফায় পানির বিল বাড়ানো হলেও পানির মান বৃদ্ধি করছে না ওয়াসা।
নগরের বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মফজল আহমেদ বলেন, ‘ওয়াসার পানি সব সময় ফুটিয়ে পান করতে হয়। সরাসরি পান করা যায় না। নানা ধরনের ময়লা-জীবাণু থাকে এ পানিতে। এ কারণে ফুটিয়ে পান করতে হয়।’
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প চালু হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ২০০৭, ২০০৯ ও ২০২২ সালেও হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়। বিষয়টি সুরাহার জন্য ২০০৯ সালে গঠিত হয় কারিগরি কমিটি। এ কমিটি পরে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় নদীর পানির লবণাক্ততা রোধে কাপ্তাই হ্রদ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ কারণে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বর্ষা মৌসুম থেকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পিডিবিকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যানেজার এ টি এম আবু জাহের বলেন, ‘কাপ্তাই লেকে পানি কমে গেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে ৪৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি মাত্র ইউনিট চালু আছে। এটিতে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ায় সবকটি ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। বর্তমানে যা পানি আছে তা দিয়ে এভাবে চলে তাহলে এক মাসের মতো একটি ইউনিট চালু রাখা যাবে। এরপর বৃষ্টি না হলে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হবে। অতিরিক্ত পানি ছাড়ার সুযোগ নেই।’