চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি লবণাক্ততার কারণে পান করা যাচ্ছে না। এতে নগরবাসী খাওয়ার পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। মিনারেল ওয়াটার কিনে পান করতে হচ্ছে। নদীতে লবণাক্ততার কারণে ওয়াসার পানি উৎপাদনও কম হচ্ছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিসংকট বিরাজ করছে। ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি লিটারে ৬০০ মিলিগ্রাম লবণাক্ত থাকলে পান করা যায়। এসব পানি পান করলে শারীরিক কোনো সমস্যা হবে না। বৃষ্টি না হলে পরিপূর্ণ লবণমুক্ত সম্ভব নয়।
গত প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন কমলেও এখন সরবরাহ করা পানি পান করা যাচ্ছে না। শুধু প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। খাওয়ার পানি নিয়ে নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সরবরাহ করা পানি ফুটিয়েও পান করার উপযোগী হচ্ছে না। এতে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্তরা লবণাক্ত পানি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যতটুকু সম্ভব লবণাক্ত পানি পান না করতে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তারা মিনারেল ওয়াটার কিনে পান করছে। অন্যদের নিরুপায় হয়ে লবণাক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। যাদের বাসাবাড়িতে গভীর নলকূপ রয়েছে, তারা নলকূপের পানি ব্যবহার করছে। আর যারা ওয়াসার পানির ওপর নির্ভরশীল, তারাই খাওয়ার পানি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লবণাক্ততার বিষয় নিয়ে গত বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় হালদা নদীতে বাইরের পানি ঢোকার সময় লবণ পৃথকীকরণের ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সমস্যাটি প্রতি বছর হচ্ছে। তাই পানি ঢোকার প্রবেশমুখে স্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন। প্রবেশমুখে ফিলটার সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। সোলার দিয়ে লবণ পৃথকীকরণের একটি আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে। তবে এটি ব্যয়বহুল। দেশের কোথাও নেই।
তবে এ ব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, লবণাক্ততার সমস্যাটা দুই-এক মাস হয়। সীমিত সময়ের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট বসানো সম্ভব নয়। কাপ্তাই লেক থেকে পানি না আসায় হালদায় কর্ণফুলী নদীর লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে। এই মুহূর্তে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো প্রক্রিয়া নেই। আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এই পানি পান করলে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না।
ওয়াসা সূত্র জানায়, তাদের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার হলেও বিতরণ নেটওয়ার্কে ত্রুটি থাকায় ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে থাকেন। এখন হালদায় লবণাক্ততা ও কর্ণফুলী নদীতে শ্যাওলা জমে থাকায় নদী থেকে পানি সংগ্রহে সমস্যা হচ্ছে। নদীতে জোয়ারের সময় পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। শুধু ভাটার সময় পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
ওয়াসার মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার ও মোহরা পানি শোধনাগারের জন্য হালদা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। এই দুটি শোধনাগারের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১৮ কোটি লিটার। হালদায় লবণাক্ততার কারণে দৈনিক সাত-আট ঘণ্টা পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে এই দুটি প্ল্যান্টে পানি উৎপাদন কমে গেছে। হালদা নদীতে জোয়ারের সময় পানিতে লবণাক্ততা থাকে লিটারে প্রায় ৪ হাজার মিলিগ্রাম। আর লিটারে ৬০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণাক্ততা থাকলে পান করা যায় না। ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে এখন তার প্রায় কাছাকাছি লবণাক্ততার মাত্রা রয়েছে। এতে পানিতে লবণের মাত্রা বেশি অনুভূত হওয়ায় পান করা যাচ্ছে না। এই দুটি শোধনাগারের পানি নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, চকবাজার, চাক্তাই, পাথরঘাটা, আন্দরকিল্লা, পতেঙ্গা, মাদারবাড়ী, এনায়েত বাজারসহ আরো কয়েকটি এলাকায় সরবরাহ দেওয়া হয়। এসব এলাকার বাসিন্দারা খাওয়ার পানি নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে।
অন্যদিকে কর্ণফুলী শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্পের দুটি ইউনিটের দৈনিক উত্পাদন ক্ষমতা ২৮ কোটি লিটার। এই দুটি শোধনাগারের জন্য কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। এখন শোধনের জন্য নদীর যে স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়, তার আশপাশে শ্যাওলা জমে যাওয়ায় পানি সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। শ্যাওলার কারণে পাইপের ফিলটার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে এই দুই শোধনাগারের দৈনিক পানি উত্পাদন প্রায় ৩-৪ কোটি লিটার কম হচ্ছে। ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, শ্যাওলার কারণে ফিলটার জ্যাম হয়ে গেছে। এখন ফিলটার পরিষ্কার করে পানি সংগ্রহ বাড়ানো হয়েছে। ফলে পানির উৎপাদনও আগের চেয়ে বেড়েছে।