বুধবার (২৩ মে) রাতে এক টুইট বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের বিষয়ে নতুন এ ভিসা নীতি ঘোষণা করেন।
সএরপর বিষয়টি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে বিতর্ক। ভিসা নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তাদের দাবি, এটি সরকারের নেতাকর্মী ও সংশ্লিষ্টদের বেকায়দায় ফেলবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাগড়া দিলে ভিসা নীতির বিপাকে পড়বেন বিএনপির নেতাকর্মীরাই।
এদিকে এক ফেইসবুক পোস্টে ভিসা নীতির বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুকে চিঠি দেয়ার তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ. আরাফাত।
চিঠিতে তিনি যা জানিয়েছেন তা ফেইসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন তিনি। চিঠিতে আরাফাত লিখেছেন, “আপনাদের সম্প্রতি ঘোষিত ভিসা নীতি অনুসারে (এবং আপনি যে চিঠিটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন) যেখানে আপনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘এই নীতি বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবৃত প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশি নাগরিক বা যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তারা যখন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে তখন তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে।’
এখানে আমি কিছু ভিডিও ফুটেজ সংযুক্ত করেছি, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন যে বিএনপির কিছু শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমি আশা করি, আপনাদের ভিসা নীতি বিএনপির এই নেতাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।”
সংযুক্ত ভিডিওতে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
এ ছাড়া ভিডিওতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলতে শোনা যায়, আওয়ামী লীগ আরও একটি নির্বাচন আয়োজনের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এই নির্বাচনকে আমাদের অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।
অধ্যাপক আরাফাতের মতে এইসব বক্তব্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের অন্তরায়। যে কারণে বিএনপি নেতারা নিজেরাই ভিসা নীতিতে পড়তে পারেন বিপাকে।
বাংলাদেশের ভিসা নীতি নিয়ে টুইট বার্তায় মার্কির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারায় একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য যারা দায়ী বা জড়িত থাকবে সেসব বাংলাদেশিদের ভিসা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’
এর আওতায় বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিসেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
এদিকে মার্কিন ভিসা নীতি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারকে আরও জোরালো করেছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য পরিবর্তিত ভিসানীতির মধ্যদিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
‘মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ দীর্ঘদিন ধরে যে দাবি জানিয়ে আসছিল, পরিবর্তিত মার্কিন এই ভিসা নীতিতে তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে,’ যোগ করেন তিনি।