‘ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য গতিতে:প্রধানমন্ত্রী

‘ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য গতিতে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। এই মাটি আমাদের, জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। কাজেই এসব ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলেই এগিয়েছে, উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে। বাংলার মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে। ভয়কে জয় করেই বাংলাদেশের জনগণ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে।’

শনিবার (২ সেপ্টম্বর) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পাশে দক্ষিণ কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত উদ্বোধন শেষে রাজধানীর পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত বিশাল সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন।

সেসময় প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কী দিয়েছে? নিজেদের আখের গোছানো, লুটপাট ছাড়া দেশকে তারা কিছুই দিতে পারেনি। এই সময়টা ছিল অন্ধকারের সময়। সেই অন্ধকার থেকে বাংলাদেশ আলোর পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’

গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকা মার্কা দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে, এই নৌকাই স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেবে। আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব আমরা তা দেখিয়েছি, প্রমাণ করেছে। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।’

উৎসবমুখর পরিবেশে বিকেল তিনটা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির বহর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ করেন। সেখানে প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল প্লাজায় নিজ হাতে টোল পরিশোধ করে দক্ষিণ কাওলাপ্রান্তে সুইচ টিপে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ সময় তার ছোট বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর মোনাজাতে অংশ নেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর সেখানে প্রকল্পের খুঁটিনাটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। উদ্বোধনের সময় কয়েক হাজার রঙিন বেলুন, নানা রঙের আতশবাজী ফুটিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন নগরবাসী।

আনুষ্ঠানিকতা শেষে বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যোগে ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় সেখানে প্রকল্পটির উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন ও মোনাজাতে অংশ নেন। দীর্ঘপথের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এরপর সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশে অংশ নেন। মাত্র ১৬ মিনিটে কাউলা থেকে ফার্মগেট প্রান্তে নেমে সমাবেশের মঞ্চে উঠে প্রথমেই প্রকল্পের উদ্বোধন ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন। এরপর ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিপিপি প্রকল্পের একটি ভিডিও প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে প্রকল্পটির বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি লি গুয়াংজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষুদে সংস্করণ উপহার দেন এবং তিনি তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, সংসদ সদস্য হাবিব হাসান, মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ, সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঝড়-ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়েই নৌকা আজকে তীরে থেকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা মার্কা অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়েছে, নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে, এই নৌকাই স্মার্ট বাংলাদেশ দেবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই নাকি গণতন্ত্র চোখে দেখে না, গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন! যাদের জন্মই হয়েছে অগণতান্ত্রিকভাবে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, উচ্চ আদালত যাদের ক্ষমতা অবৈধ ঘোষণা করেছে, তাদের হাতে গড়া দল বিএনপি কীভাবে গণতন্ত্র দেবে? তারা তো গণতন্ত্র দিতে জানে না, বিশ্বাসও করে না। তারপরও তারা আন্দোলনের নামে অনেক সময় অনেক কথা বলে। বাংলাদেশের মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে, ওইসব ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ তো ছয় ঋতুর দেশ। ছয় ঋতুর দেশে আমরা তো দেখি কখনো বর্ষা, কখনো ঝড়, কখনো জলোচ্ছ্বাস, কখনো রৌদ্রজ্জ্বল- বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিস দেখে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। আজকে যারা আন্দোলনের নামে রোজই ক্ষমতা থেকে আমাদের ফেলে দিচ্ছে, আমি আপনাদের বলতে চাই- যারা এখানে উপস্থিত সকলকে আমি বলব কবির ভাষায়- ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে।’ মেঘের ঘনঘটা আমরা দেখি। তারপর তো সূর্য উঠে। কাজেই ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।’

দেশে একটা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রয়েছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন বলেন। তারা কী গণতন্ত্র দিয়েছে, আমরা জানি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব। এটা আমরা দেখেছি ও প্রমাণ করেছি। তবে তার জন্য স্থিতিশীলতা দরকার। অগ্নিসন্ত্রাস, হত্যা, খুন অনেক কিছু আমরা দেখেছি। কিন্তু সেগুলো উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৭ সময়কালে দেশ ছিল অন্ধকারে। এখন আর সেটা নেই। বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, সেটা একের পর এক পূরণ করে যাচ্ছি। কবি সুকান্তের ভাষায়- ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আজকে একটা সাময়িক সমস্যা চলছে। আমাদের ওপর অর্থনৈতিক ধাক্কা এসেছে। এজন্য আমি বলেছি, দেশে কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। নিজের ফসল নিজে ফলাব। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করে খাব। কারও কাছে হাত পাতব না। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুকের জাতির উন্নতি হয় না। দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানাই তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের দেশ সেবার করার সুযোগ দিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশকে আর কারো কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেতে হয় না।’

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘পদ্মাসেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যায় না। মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক উদ্বোধন করলাম। এগুলো সবই জনগণের স্বার্থে। সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতি করেছি। আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’

দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘নতুন মাইলফলকবলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, যানজট নিরসনে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এক্সপ্রেসওয়ে বিশেষ করে এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্বরোড, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মগবাজার, কমলাপুর এলাকার যানজট নিরসন করবে। এর ফলে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হবে, কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না, মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’