হৃদয়কে হত্যার পর মাংস কেটে আলাদা করে খুনিরা : পুলিশ

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে হত্যা করে তার লাশ যেন শনাক্ত করা না যায় সেই লক্ষ্যে শরীর থেকে মাংস আলাদা করে খুনিরা। আজ রোববার (১ অক্টোবর) দুই খুনিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আলোকে সংবাদ সম্মেলনে এমন লোমহর্ষক তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।

গত ১১ সেপ্টেম্বর অপহরণের ১৪ দিন পর পাহাড়ের গহীন অরণ্যের একটি গর্ত থেকে হৃদয়ের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ দিন হত্যায় জড়িত আসামি উমংচিং মারমাকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর থানায় আনার সময় স্থানীয় জনতা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। সর্বশেষ উচিংথোয়াই মারমা ও তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উচিংথোয়াই মারমাকে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে ও তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

লে. কর্নেল মাহবুব আলম জানান, মুরগিকে পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে বিক্রি করে দিতেন খামারে কর্মরত শ্রমিকরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন পোল্ট্রি খামারের ম্যানেজার হৃদয় (১৯)। এ কারণে খামারে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বাকবিতণ্ডাও হয় তার। তখন থেকে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেন, হৃদয়কে উচিৎ শিক্ষা দেবেন। এ জন্য তাকে খামার থেকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যান।

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার উচিংথোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, হৃদয়কে অপহরণের একদিন পর ২৯ আগস্ট বিকেলে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে হত্যা করা হয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজে ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটেন। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ চার জন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরেন। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন শুধু যারা খামারে কাজ করতেন, তারাই। তাদের মধ্যে উমংচিং মারমা ও অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। উচিংথোয়াই মারমা তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনেন। তাদের দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে- এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানেন না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, এটি সত্য। মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনোও তথ্য পাওয়া যায়নি।’

তিনি জানান, হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে পাহাড়ের চূড়ায় কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দেন। পরবর্তীতে আসামি উচিংথোয়াই মারমাসহ অন্যান্য খুনিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বাঁচতে হত্যার আলামত ধ্বংস করার জন্য লাশের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলে দেন এবং হাড়গোড় গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে চলে আসেন।

লে. কর্নেল মাহবুব আলম জানান, গত ২৮ আগস্ট হৃদয়কে অপহরণের পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন খুনিরা। মুক্তিপণের টাকা পরিবার দিতে রাজি হওয়া সত্ত্বেও গত ২৯ আগস্ট রাতে হৃদয়কে খুন করেন তারা। হত্যার পর ফিরে এসে আসামি উমংচিং মারমা বন্ধু উচিংথোয়াই মারমার মোবাইলে সিম ঢুকিয়ে মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার জন্য হৃদয়ের বাবাকে ফোন দেন। ছেলেকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশায় হৃদয়ের বাবা ও নানা মিলে গত ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে আসামি উচিংথোয়াই মারমাকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেন। মুক্তিপণের ২ লাখ নিয়ে হৃদয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাসায় ফিরে যাবে বলে তার বাবাকে জানান।

আসামি উচিংথোয়াই মারমা স্ব-শরীরে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণ করায় ২ লাখ টাকার মধ্যে তিনি একাই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন এবং অন্য আসামিদের ৫০ হাজার টাকা ভাগ করে দেন।

আসামিদের দেওয়া জবানবন্দী থেকে জানা যায়, অপহরণ ও হত্যায় উমংচিং মামরাসহ ৯ থেকে ১০ জন সহযোগী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে র‌্যাব ২ জন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।