চট্টগ্রামে নতুনভাবে এমএলএম কোম্পানীর এলিট কর্পোরেশনের মালিক ইসমাইল ও জিএমআইটির চেয়ারম্যান কামরুল কায়েস দুজনে অনলাইন বিক্রেতাদের উদ্যক্তা হিসাবে চিহ্নিত করে মূলত এলিট কর্পোরেশনের ভুয়া পন্য জিএমআইটির সদস্যরা বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
ষোলকবহর ৮নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় কাউন্সিলর মোরশেদ আলমকে জিএমআইটির উপদেষ্টা দেখিয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে এবং সফল হয়েছেন।প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বাধা না আসায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এরমধ্যে কাউন্সিলর মোরশেদ আলম গনমাধ্যমকে তিনি জিএমআইটির উপদেষ্টা নয় বলে জানিয়ে তার অবস্থান পরিস্কার করেন।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামে তারা কয়েকজন সিন্ডিকেট করে যুব সমাজ, ছাত্র ছাত্রী ও বেকারদের রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভ দেখিয়ে গোপন অফিস করে তাদের মাধ্যমে ভুয়া হারবাল প্রোডাক্ট বিক্রি করাচ্ছে।
তাদের সাইনবোর্ড বিহীন গোপন অফিসের কয়েকজন প্রতিবেদককে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর প্যানেলে রয়েছেন হাটহাজারীর নাজাতুল আলম জিসান, ব্যাটারী গল্লির জাবেদ সিদ্দিকী নীল। ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে বাশখালীর আইয়্যুব হেলালী, আবু নাঈম, আলী আজম তাসকিন, ইমন শাহ- রিয়ার নাছের, ইফতেখার ইফতি নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
উদ্যক্তা তৈরী ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে জিএমআইটি (ডিসিডি বা উদোক্তা বা ইকর্মাস বা আইটি সেন্টার) পরিচয় দিলেও এমএলএম সিস্টেমে যুব সমাজ, এসএসসি ও এইচএসসি বয়সের ছাত্রছাত্রিদের প্রতারণার ইদুর ফাদে ফেলে বিসিএসআইআরের টেষ্ট সার্টিফিকেটকে পুজী করে ড্রাগ ও বিএসটিআই অনুমোদনহীন লোভনীয় নামে অকার্যকর হারবালসহ সেক্স আইটেম বিক্রি করছে বলে জানান সেখানে কয়েকজন কর্মরত ও সাধারণ ভোক্তারা।
সরেজমিনে জানা যায়, জিএমআইটির আইটি ইন্সিটিউট হিসাবে নিবন্ধন দেখা গেলেও আইটি ছাত্র গড়ার নামে মূলত তারা এলিট কর্পোরেশনের সাইনবোর্ড বিহীন ছদ্ম অফিস ব্যবহার করে বেকার ও সদ্য এসএসসি, এইচএসসি কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীকে টার্গেট করে উদোক্তা তৈরী করার নামে তাদের দিয়ে অনলাইন মার্কিটিংয়ের মাধ্যমে এলিট করপোরেশনের ভুয়া হারবাল প্রোডাক্ট বিক্রি করাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানে কর্মরত কয়েকজন জানান, বিভিন্ন ট্রেনিং এর মধ্যমে শেখানো হয় কিভাবে সেক্স প্রোডাক্টসহ মোটা তাজা, লম্বা হবার প্রোডাক্টগুলো মানুষের কাছে বিশ্বাস যোগ্য করে তুলে বিক্রি করতে হয়।
প্রতিবেদকের হাতে তাদের আকর্ষনীয় মোড়কে করা কিছু প্রোডাক্ট এসেছে। যা ওজন বাড়ানোর জন্য মিল্কসেক, বাদাম সেক, মালাই সেক ও ওজন কমানোর জন্য স্লিমিং টি, কেটো গ্রীন, লেমন জুসি, ব্লু-গ্রীন সেইসাথে লোভ- নীয় বিভিন্ন সেক্সুয়াল হারবাল প্রোডাক্ট ‘লাভ ফর ইভার’ লম্বা হওয়ার জন্য হাইট গ্রোথ প্লাস সম্প্রতি ভুয়া প্রোডাক্ট বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রোডাক্টের আকর্ষনীয়তা বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক, ফেসবুক ও ইউটিউব সেলিব্রিটিদের দিয়ে লোভনীয় বিজ্ঞাপন তৈরী করে বিভিন্ন হেলথ্ রিলেটেড নাম দিয়ে পেজ খুলে বুষ্টিং করে ক্রেতাদের আকর্ষিত করে। তাদের প্রোডাক্টগুলো আন্তর্জাতিক মানের প্রোডাক্ট বলে তারা প্রচার করে। প্রোডাক্টের উপাদানগুলো আমেরিকার সিকাগো থেকে আসে বলে এমন ভুয়া প্রচারণা ছড়াচ্ছে।
ক্রেতাদের কাছে প্রোডাক্টের বিশ্বাস যোগ্যতা বাড়াতে তাদের তৈরী করা ফেইক রিভিউ কাস্টমারকে শো করে এবং তাদের প্রডাক্টগুলো বি এস টি আই ও বাংলাদেশ সাইন্স ল্যাব কর্তৃক পরীক্ষিত ও অনুমোদন প্রাপ্ত বলে প্রচারণা ছড়িয়ে প্রমাণ স্বরুপ কাস্টমারের ইনবক্সে টেস্ট রির্পোট পেশ করে। এলিট কর্পোরেশনের আকর্ষনীয় পন্যগুলোর বিসিএসআইআর টেষ্টরির্পোটগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় যার প্রতিটা পন্যর টেষ্ট রিপোর্ট একই। তাদের সব রিপোর্টে আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও এনর্জির কথা উল্লেখ করা আছে।
ওজন বাড়ানো জন্য যে পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কি একই পুষ্টি উপাদান ব্যবহার হয়? অথবা সেক্সুয়াল প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেও একই পুষ্টি উপাদান কতটুকু ভূমিকা রাখে?? বিসিএসআইআর পরিচালক ড. বরুন কান্তি সাহা বলেন, প্রথমত আমরা কোনো প্রোডাক্টের অনুমোদন দেই না যদি কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান প্রচার করে থাকে যে তাদের প্রোডাক্ট আমাদের থেকে অনুমোদন প্রাপ্ত তাহলে কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমরা শুধু প্রোডাক্টের স্যাম্পল পরীক্ষা করি। এলিট কর্পোশনের টেষ্ট রির্পোটগুলো দেখালে তিনি বলেন প্রতিটি রির্পোটই অনেক পুরোনো। এই রির্পোট গুলোর মেয়াদ সর্বোচ্ছ ত্রিশ দিন তাও আবার একটা বেইস এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেহেতু তারা একাদিক বেইসে একটাই সার্টিফিকেট ব্যাবহার করছে তাই বলা যায় এই রিপোর্টগুলো ভুয়া। এই রির্পোট গুলো ব্যানিজিক কাজে ব্যাবহারে কোনো নিয়ম নেই। এলিট কর্পোশন আইন অমান্য করে বাণিজ্যক কাজে এটি ব্যাবহার করছে। বিসিএসআইআর ও সিটি কর্পোরেশনের দেয়া ট্রেড লাইসেন্সের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় এলিট করর্পোশনের কোনো অফিস নেই উক্ত ঠিকানায়।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাদের ছদ্ম অফিসগুলোতে কোনরুপ সাইনবোর্ড নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তাদের মোবাইলের মাধ্যমেই দেশের প্রত্যক ভোক্তা বা বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। সেই ছদ্ম অফিসে প্রোডাক্টগুলো রাখা হয়না। তাদের নিজস্ব গোডাউন থেকে প্রোডাক্টগুলো মোবাইল এপসের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার গ্রাহকের ঠিকানা নিয়ে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এই বিষয়ে স্থানীয়দের থেকে জানতে চাইলে তারা বলে গত ২ মাস আগে পশ্চিম কুয়াইশে একটা হারবাল পন্য বানানোর ফ্যাক্টরি ছিল এবং এখানে বিভিন্ন হারবাল প্রোডাক্ট তৈরী করা হতো কিন্তু প্রায় দেড় মাস আগে অভিযান করে মেজিষ্ট্রেট এসে ফ্যাক্টোরিটি বন্ধ করে দেয়। ফ্যাক্টরীটি এখানে বন্ধ হলেও জানা যায় তৈরি করছে। গত আগষ্টের ৪ তারিখ ২০২৩ইং আইয়্যুব হেলালীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ভেজাল ঔষধ ও ভেজাল প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রির দায়ে মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর ও দক্ষিন) মামলা করেন। সিএন্ডবি কলোনীর বিপরীত পাশের অফিস থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করেন।
এ বিষয়ে জিএমআইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল কায়েসের মুঠোফোনে ফোন দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
জিএমআইটির প্রতিষ্ঠানের মানিক বলেন, আমরা উদ্যক্তা হতে এসেছিলাম। এখানে এসে দেখি ভুয়া প্রোডাক্টের বিক্রয় কর্মী। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নম্বর চাইলে সে বলেন, তিনিতো ধরা ছোয়ার বাইরে থাকেন। কারন জিএমআইটিকে আইটি সেন্টার বলা হলেও তা আসলে আইটি সেন্টার নয়। এটা প্রোডাক্ট বিক্রয় বেস। তাই তিনি কারু সাথে ধরা দেন না। আমরা যে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মি সে হিসাবেও কোন ডকুমেন্ট দেয়া হয়না।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে পরিচিত আইয়্যুব হেলালীকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমি আগে ছিলাম। এখন এই প্রতিষ্ঠানের সাথে নাই। আমার সাথে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের সাথে জামেলা হয়েছে। জিএমআইটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যা বলার প্রশাসনকে বলেছি। বাকিটা আপনার সাথে সাক্ষাতে বলবো। তিনি প্রতিষ্ঠানের ম্যানিজিং ডিরেক্টর কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ডাইরেক্টর ছিলাম। ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মূলত জাবেদ নামে এক লোক।