ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরান ও ইসরায়েল একেঅন্যকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে দোষারোপ করেছে। পাশাপাশি দুই দেশই তাদের চিরশত্রু হিসেবে একজন আরেকজনকে উল্লেখ করে পরিষদকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য দাবিও জানিয়েছে। খবর এএফপির।

ইসরাইলে ইরানের নজিরবিহীন হামলার পর গতকাল রোববার (১৪ এপ্রিল) নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ জরুরি বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূত জিলাড আরডান ইরানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই হামলার মধ্য দিয়ে মুখোশ খুলে গেছে তাদের। ইরান হলো বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী তৎপরতার মদতদাতা। এই অঞ্চল ও বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে তাদের সত্যিকার চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।’ তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানান।

আরডান নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে অনেক দেরি হওয়ার আগেই সম্ভাব্য সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান।

জিলাড আরডান তেহরানের বিরুদ্ধে পুনরায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ২০১৫ সালের এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে বেরিয়ে এসেছিল।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব আছে যাতে ইরান পরিষদের সনদ মেনে কাজ করে ও তার ব্যত্যয় ঘটলে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে ইরানকে দায়ী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরও তৎপর হবে।’

শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু করে রোববার ভোর পর্যন্ত ইরান তার শত্রু ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এতে তিনশ’র বেশি ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং শক্তিশালী ড্রোন ব্যবহার করা হয়। তবে এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বেশিরভাগই ইসরায়েল মাটিতে নামিয়ে আনতে পেরেছিল বলে জানিয়েছে। ইসরায়েল ছাড়াও এই কাজে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান ও ব্রিটেন।

ইরান জানায় গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলি হামলার জবার দিতে চালানো হয় এই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ইসরায়েলি হামলায় সে সময় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাত সদস্য মারা যায় যাদের মধ্যে পদস্থ দুজন জেনারেলও ছিলেন।

নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইরান আত্মরক্ষার সহজাত অধিকার চর্চা করছে। নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’

ইরাভানি বলেন, ‘তাই আত্মরক্ষায় সাড়া দেওয়া ছাড়া ইরানের সামনে আর কোনো উপায় ছিল না।’ তিনি জানান, যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটুক তা ইরান চায় না, তবে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার দেশ সাড়া দেবেই।

সাইদ ইরাভানি ইসরায়েলের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘সময় এসেছে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব পালন করার, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকিকে মোকাবিলা করার।’ তিনি জানান, পরিষদকে অবশ্যই গাজা উপত্যকায় গণহত্যা বন্ধে জরুরি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গতকাল রোববার সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য বা এই বিশ্ব আর যুদ্ধের ধকল সইতে পারবে না। গুতেরেস অবশ্য ইসরায়েলে ইরানের হামলার পাশাপাশি ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলের হামলারও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘এখন সময় উত্তেজনা প্রশমনের ও তা যেন বিস্তৃত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার। এখন সময় খাদের কিনারা থেকে সরে আসার।’