ভারতের লোকসভা নির্বাচনে যা আশা করা হয়েছিল, তার চাইতে অনেক বেশি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে পরপর তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় যেতে প্রস্তুত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ৫৪৩ আসনের লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে সরকার গঠন করতে যে ২৭২টি আসন প্রয়োজন হয়, তা পূরণে তার জোটের মিত্রদের রয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা। খবর বিবিসির।
গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক যুগ সময় প্রভাবশালী ভূমিকা পালনে অভ্যস্ত নরেন্দ্র মোদির জন্য নির্বাচনের এই ফলাফল এক ধরনের ধাক্কাই বলা চলে।
অন্যদিকে, জনগণের এই রায় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া জোটের’ জন্য হয়ে ওঠেছে বিস্ময়কর পুনর্জাগরণ হিসেবে। বুথফেরত জরিপ এবং নির্বাচন-পূর্ব সব সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করেছে তাদের এবারের ফলাফল। ভারতের ৬৪ কোটিরও বেশি ভোটার এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, যাকে বিশ্বরেকর্ড হিসেবে ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। আর এই ভোটারদের অর্ধেকই ছিলেন নারী।
নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপি লোকসভার আসন সংখ্যায় সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যদি জোটের সহায়তায় নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন, তবে তার জন্য সেটি হবে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করা। এর আগে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তিন মেয়াদে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
নির্বাচনে অবশ্য মোদির ৪০০ আসন লাভের অভিপ্রায় পূরণ হয়নি , বরং উল্টো তার দলের আসন সংখ্যা কমে গেছে। তবে ফলাফল যাই হোক, নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরা বিশ্বাস করেন তার ক্ষমতায় আসার পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে।
প্রথমেই বলা যায়, স্থিতিশীল সরকার হিসেবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভাবমূর্তি। এ ছাড়া ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়টিও ছিল অন্যতম। পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে সামাজিক কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও বহির্বিশ্বে ভারতের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করার মতো।
হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে মোদি তার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে–কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ ও নাগরিকত্ব আইনের বাস্তবায়ন করা।
বিজেপির আসন কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন কারণে। আর এগুলোর মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সমাজে অসমতা ও বিতর্কিত সেনা নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কার।
এ ছাড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মোদির বিভেদকারী প্রচারণাও এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ‘আব কি বার ৪৪০ পার’ প্রচার প্রচারণা তার এনডিএ জোটের জন্য উল্টো ফল বয়ে নিয়ে এসেছে, কেননা এই স্লোগান গরিব জনসাধারণের মধ্যে সাংবিধানিক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করেছে।
তবে যাই হোক না কেন ২৯৩টি আসন পেয়ে এনডিএ জোট আবারও ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। আর ২৩২টি আসন পেয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া জোট’ বিরোধী দল হিসেবে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।