স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের তিন দিন পর আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেবে। ইতোমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্স থেকে দেশের পথে রয়েছেন। আজ দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাঁর। আজ রাত ৮টায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
গতকাল বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবার সম্মতিক্রমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ১৫ জন সদস্য থাকতে পারে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেনা সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে ড. ইউনূসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আমরা আশা করছি, তিনি তাঁর দক্ষতা ও সক্ষমতা দিয়ে দেশে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন। সহযোগিতা করলে আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর দেশ ও সমাজ গঠন করতে পারব।’ এ সময় তিনি সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখারও আহ্বান জানান।
এদিকে, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে বলেছেন, ‘কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সকলকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি সাহসী ছাত্রদেরকে অভিনন্দন জানাই, যাঁরা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যাঁরা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আসুন আমরা আমাদের এই নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি। আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সকলকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্র ও দলমত নির্বিশেষে সকলকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে এই সুযোগটি আমরা হারাতে পারি না। সহিংসতা আমাদের সকলেরই শত্রু। অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সকলে শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন।’
সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন একপর্যায়ে গণ-আন্দোলনে রূপ নেয় এবং কয়েকশ প্রাণহানি হয়৷ শেখ হাসিনা সরকার আন্দোলনকারীদের দমনে বাড়াবাড়ি রকমের শক্তি প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ উঠে নানা মহল থেকে৷ তীব্র আন্দোলনের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) দ্রুত বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা৷