-চট্টগ্রাম প্রতিনিধি-
সালমান এফ রহমানের নির্দেশে পরিচালিত একটি চক্র সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে
দরবেশ বাবার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে লাভজনক ও অত্যাধুনিক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশের একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করে তারা। তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘আত্মঘাতী’ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে মন্ত্রণালয়।
সফলভাবে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের কারণে আমদানি-রফতানীমূলক আন্তর্জাতিক বাজারে খুব অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বন্দর। যার ধারাবাহিকতায় গত ৫ বছরের (২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল) প্রায় তিন হাজার ৮২০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সফলতার ধারাবাহিকতায় যে ৪টি কোম্পানি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। বন্দরের ধারাবাহিক এই সফলতায় কু-নজর পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বিতর্কিত ব্যবসায়ী শেয়ারবাজার লুণ্ঠনকারি সালমান এফ রহমানের। যিনি আওয়ামী রাজনীতিতে দরবেশ বাবা নামে সমাধিক পরিচিতি।
সূত্র জানায়, দরবেশ বাবার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে লাভজনক ও অত্যাধুনিক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশের একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করে তারা। তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘আত্মঘাতী’ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে মন্ত্রণালয়। অভিযোগ রয়েছে, সালমান এফ রহমানের নির্দেশে পরিচালিত সে চক্রটি নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)কে বিদেশী একটি কোম্পানিকে হস্তান্তরের জন্য নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে বন্দর সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের দাবি, দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা অপারেটরকেই ওপেন টেন্ডারের (ওটিএম) মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক দরে দীর্ঘমেয়াদে এই টার্মিনাল পরিচালনার ভার দেওয়া হলে বন্দরের রাজস্ব হাজারকোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করে। ১ হাজার মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৬ হেক্টর প্রস্থের (ব্যাকআপ ফ্যাসিলিটিজসহ) এই টার্মিনাল ২০০৭ সালে চালু হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এনসিটিতে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এনসিটিতে মোট পাঁচটি বার্থ রয়েছে-যেখানে সমুদ্রগামী জাহাজ ভেড়ানো হয়। এর মধ্যে একটি বার্থ পানগাঁও টার্মিনালের জন্য সংরক্ষিত রাখা হলেও বাকি চারটি বার্থ ওপেন টেন্ডার করা হয়। দুটি বার্থ সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড এককভাবে পায়। অপর দুটি বার্থ যৌথভাবে পায় এমএইচ চৌধুরী ও এএন্ডজে নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ।
২০১৫ সাল থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে তারা বার্থগুলো পরিচালনা করে। বন্দরের সিসিটি (চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল) আগে থেকেই অপারেটিং করত সাইফ পাওয়ার টেক। এনসিটি সিসিটির ব্যাকআপ ফ্যাসিলিটিজ হিসাবে ব্যবহার করা হতো। এনসিটি প্রথমে ডিপিএম পদ্ধতিতে পরে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পরিচালনার দায়িত্ব পায় সাইফ পাওয়ারটেক। বর্তমানে এনসিটির পুরোটাই হ্যান্ডলিং করছে এই টার্মিনাল অপারেটর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমীন বলেন, চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল অপারেটিংয়ের মাধ্যমে বছরে এক থেকে দেড়শ মিলিয়ন ডলার আয় করে চট্টগ্রাম বন্দর। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের কর্মকাণ্ড যদি বিদেশীদের হাতে চলে যায় তাহলে বিপুল পরিমানে রাজস্ব হারাবে সরকার। এই কারণে সাইফ পাওয়ারটেক বিদেশীদের কাছে কনটেইনার টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম দেওয়ার বিরোধীতা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, চিটাগং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশী কোম্পানীকে দিয়ে দিতে পারলে সেখান থেকে একটি ভালো কমিশনার পাবে সেই চক্রটি। যার কারণে সালমান এফ রহমানের নির্দেশে পরিচালিত একটি চক্র সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হলেও নানা জটিলতায় নতুন করে টেন্ডার করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। মেয়াদ শেষে ডিপিএম (ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) পদ্ধতিতে বিদ্যমান অপারেটরদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়োগ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেবা যাতে বন্ধ না হয় সেজন্যই এটি করা হয়। অপারেটর হ্যান্ডলিংয়ের দর বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময়ে আবেদন করলেও সেই আবেদন বিবেচনা করেনি বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, এনসিটি বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এজন্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করেছিল। প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটি বিষয়টি দেখছে। তবে সরকার পতনের পর এ বিষয়ে পরবর্তী আর কোন সিদ্ধান্ত বা অগ্রগতি আমাদের জানানো হয়নি। বিদ্যমান টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক এই টার্মিনালে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।