গডফাদার ফজলে করিম গ্রেফতারে দুবাই সিন্ডিকেটে অস্থিরতা ও অবৈধ সম্পদের পাহাড়!

দুবাইস্থ রাউজান সমিতির আহ্বায়ক খোরশেদ জামানের শারজার বাগানবাড়িতে ফজলে করিমের ছিল আমোদ ফুর্তির আসর। সেখানে নারী সরবরাহ করতো দুবাইয়ের কুখ্যাত নারী ও হোটেল ব্যবসায়ী হাতকাটা আফসার, বাড়ুয়া আমিন,চামড়া জসিম ও রওশন নামের চার নারী ব্যবসায়ী। রাত হলেই দেরা জনার্ঢ ও আল দাগাইয়া হোটেলে ফজলে করিমের সাঙ্গোপাঙ্গরা সবসময় নারী আর মদ নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে মেতে থাকতো। শুধু তাই নয়, এসব হোটেলে বসে সাধারণ প্রবাসীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন করতো ফজলে করিম চৌধুরী। রাউজানের কুখ্যাত এই আওয়ামী লীগ নেতা আটক হওয়াতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রবাসী ও তাদের স্বজনরা।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী গ্রেফতারের পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে (দুবাই) গড়ে তোলা তার নানা অপকর্মের সিন্ডিকেটে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তার পাচার করা অর্থে আমিরাতে গড়ে ওঠা অবৈধ সম্পদের ভাগবাটোয়ারা নিয়েও এই সিন্ডিকেটের মধ্যে নানা ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, তার গ্রেফতারের খবর প্রকাশের পর রাউজানে মিষ্টি বিতরণ করেছেন বিভিন্ন সময় তার হাতে নির্যাতিত বহু মানুষ। আবার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলও করতে দেখা যায়।

সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি কালো টাকার পাহাড় লুকানোর জন্য তার নিজ এলাকাসহ চট্টগ্রামের বেশ কিছু ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নৎসাত করার লক্ষ্যে এই সিন্ডিকেট ১০ কোটি টাকা পাঠান দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক সেক্টরসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের কাছে। হাজারও নিরপরাধ ছাত্রদের বুকে গুলি করার জন্য এই সিন্ডিকেটের ভূমিকা রয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফজলে করিম চৌধুরীর মূল হোতা হিসেবে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে- গ্যারেজ ফরিদ, খোরশেদ জামাল, নজরুল ইসলাম, সেলিম চৌধুরী, মুসা (প্রকাশ : চায়না মুসা), আবুল কাশেম, মোহাম্মদ আজগর হোসেন, চামড়া জসিমসহ ফজলে করিম চৌধুরীর ব্যবসায়ীক পার্টনার সিএনজি জসিম অন্যতম।

জানা গেছে, উল্লেখিত ব্যক্তিদের নিয়ে ফজলে করিম চৌধুরী আরব আমিরাতে অপরাধের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, এসব ব্যক্তিদের নামেও বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

বিদেশের মাটিতেও এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ভয়ে কথা বলার সাহস পেত না কেউ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ করলে তাদের তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ কনসু্যলেটের কনসাল, জেনারেল বিএম জামাল হোসেনের কাছে জমা দেয় এই সিন্ডিকেট।

এবিএম ফজলে করিম ছাড়াও এস আলম গ্রুপ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ, শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফসহ একাধিক ব্যক্তির পাচারকৃত টাকা এই সিন্ডিকেটের কাছে জমা রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী গ্রেফতারের পর এই সিন্ডিকেট এখন ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ফজলে করিম চৌধুরী ঘুম, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল, সিন্ডিকেট ও টেন্ডার বাণিজ্য, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, পাহাড়ে বনাঞ্চল উজাড়সহ নানান অপকর্মের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন রাউজানে।

তার অত্যাচারে হাজার হাজার রাউজানবাসী শহর কিংবা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে, ফজলে করিমের গ্রেফতারের খবর প্রকাশকের পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রাউজানবাসী। বিভিন্ন সময় তার হাতে নির্যাতিত অনেক মানুষকে মিষ্টি বিতরণসহ ফাঁসির দাবিতে মিছিল করতেও দেখা যায়।