নির্বাচিত হলে বিএনপি জাতীয় সরকার গড়ে দেশ চালাবে : মির্জা ফখরুল

নির্বাচিত হয়ে এলে বিএনপি একা দেশ চালাবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা একটি জাতীয় সরকার গড়ে, যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিল তাদেরকে নিয়ে দেশ চালাব। তাহলে সমস্যা কোথায়? সন্দেহটা কোথায়? সন্দেহ কিন্তু আপনাদের ওপর আসতে শুরু করেছে।’

আজ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হব। আমরা চাই না, শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন আবার ফিরে আসুক।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দেশে গার্মেন্টস শিল্প, রেমিটেন্স, উচ্চ ফলনশীল ধানের সূচনা হয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছিলেন। কীভাবে আমরা তার অবদান ভুলি? তিনি বিশ্বাস করতেন, গণতন্ত্র একমাত্র রাস্তা। দেশকে ধ্বংসকারীরা তাকে হত্যা করল।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার পার্লামেন্টারি গভমেন্ট ঘোষণার মাধ্যম দিয়েই স্বৈরাচার এরশাদকে সরানো গেছে। শেখ হাসিনা যখন কেয়ারটেকার গভমেন্ট বাতিল করল, তখন আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি। কেন পারলাম না? এটা তো সত্য, ১৫ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে আমরা তাকে সরাতে পারিনি। তবে ফাইনাল গোলটা কিন্তু ছেলেরা দিয়েছে। এটা তো স্বীকার করতেই হবে আমাদেরকে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা, গণতন্ত্রের জন্য স্পেস তৈরি করা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা মাধ্যমেই তো আমরা সংস্কারের ৩১ দফা তুলে ধরেছি। এখন নতুন যারা আসছেন, তারা একেকজনের একেক কথা বলে যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তারা তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই। রাজনীতি একটি সায়েন্স, এজন্যই তো বলা হয় পলিটিক্যাল সায়েন্স। বিএনপি কি ক্ষমতায় জন্য নির্বাচনের কথা বলছে? না। দ্রুত নির্বাচন দিলেই দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের ইন্টেলিজেন্সের ভেতরে তথ্য ছিল না? তারা কি এ ব্যবস্থা আগে নিতে পারতেন না? আসলে গভমেন্টটা এখনও স্ট্যাবল হতে পারেনি। তাই বলছি, নির্বাচন কমিশন ঠিক করে নির্বাচন দেন, একটি রোডম্যাপ ঘোষণা দেন, কবে কী করবেন জানান। তাহলে মানুষের মনে আস্থা আসবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেকে বলাবলি করেন, এজন্যই কি সংগ্রাম করেছি? এতে করে আমাদের শত্রুরা সুযোগ নেবে। সরকার থেকে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। তবে আমি বলতে চাই, যেকোনো একদিকে ফোকাস দিন। পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন। বাকি সংস্কারগুলো নির্বাচিত হয়ে যারা আসবেন তারা করবে।’

শিক্ষা কাঠামোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৫৩ বছরে আমরা কী সাফল্য অর্জন করেছি শিক্ষা খাতে? বিশ্বের এক হাজার ইউনিভার্সিটি মধ্যে আমাদের একটিও সিরিয়ালে আসে না। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি না। দেশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে শেখ হাসিনা। দেশের সব অর্জন ১৫ বছরে শেষ করেছে সে।’

‘আমাদেরকে ইস্পাত কঠিন সময়ে ঐক্যের জায়গায় এক থাকতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আজিজুল হক, ড্যাবের সভাপতি ড. হারুন আল রশীদ ও অধ্যাপক ড. আবু আহমেদসহ অন্যান্যরা।